ফরিদপুরে মন্দিরে আগুন দেয়া সন্দেহে দুই সহোদর শ্রমিক গনপিটুনেতে নিহতঃ
উজ্জ্বল রায়।।
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী নামক গ্রামের বারোয়ারি মন্দিরের কালী প্রতিমায় আগুন লাগার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধদের হামলায় দুই মুসলিম নির্মাণশ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত আরো পাঁচ শ্রমিক চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হামলার প্রায় কয়েক ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ রাখায় হতাহতদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাতে দেরি হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। হামলায় নিহত নির্মাণশ্রমিকরা হলেন- মধুখালী উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ঘোপেরঘাট গ্রামের শাহজাহান খানের ছেলে আশরাফুল (২১) ও তার ভাই আসাদুল (১৫)। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার জানান, হিন্দু অধ্যুষিত পঞ্চপল্লী গ্রামের ওই বারোয়ারি মন্দিরের কালী প্রতিমায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তারা মন্দির থেকে ২০ গজ দূরের পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লক নির্মাণ কাজে নিয়োজিত মুসলিম সাত শ্রমিককে সন্দেহ করে স্কুলের শ্রেণিকক্ষে অবরুদ্ধ করে বেধড়ক মারধর করে। খবর পেয়ে মধুখালী থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গেলে বিক্ষুব্ধরা তাদেরও অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে ফরিদপুর জেলা সদর ও রাজবাড়ি জেলা পুলিশের সহযোগিতায় কয়েক ঘণ্টা পর অবরুদ্ধদের উদ্ধার করা হয়। তিনি জানান, আহত অবস্থায় সাত শ্রমিককে উদ্ধার করা হলেও তাদের মধ্যে চারজন অচেতন ছিল। আহতদের উদ্ধার করে দুজনকে মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক আরও জানান, ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রদান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. মোরশেদ আলম জানান, শত শত মানুষ এই হামলায় অংশ নেয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি বর্ষণ করা হয়েছে। বিক্ষুব্ধদের ছোঁড়া ইট পাটকেলের আঘাতে পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন।পুলিশ সুপার জানান, এই ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। পরিস্থিতি বর্তমানে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে বলে জানান তিনি। আহত শ্রমিক লিটন মোল্লা জানান, আগুন দেখার পর এলাকাবাসীর সাথে আমরাও নেভানোর কাজে অংশ নেই। কিন্তু বিক্ষুব্ধরা শ্রমিকদের সন্দেহ করে হাত পা বেঁধে গণপিটুনি দেয়। বিক্ষুব্ধ বিপুলসংখ্যক মানুষ লাঠি রড ইট দিয়ে হামলা চালিয়ে বেধড়ক মারপিট করে আমাদের। এইসময় স্কুলটির দরজা জানালা ভাঙচুর করে তারা। এদিকে ডুমাইন এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রাখতে পুলিশের পাশাপাশি একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিজিবি তিন প্লাটুন সদস্য মোতায়েন করা হয়।ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন বলেন, ‘মাগরিবের নামাজ পড়ে আমি মাঠে বসেছিলাম। কিছু সময় পরে এই ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার অজিত বাবু আমাকে ফোন দেন। বললেন, আপনি দ্রুত আসেন, এখানে মন্দিরে আগুন দিছে। কে বা কারা? বললেন, এখানে লেবাররা আগুন দিছে। তাদেরকে ধরে রাখছি।’তিনি আরও বলেন, ‘আমি তাৎক্ষণিকভাবে এখানে আসলাম। এসে দেখি হাজার হাজার জনতা। আমি জনগণকে শান্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু দেখলাম যে পরিস্থিতি বেগতিক। এখানে আসলে প্রশাসন ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব না। আমি সরে গিয়ে প্রশাসনকে ফোন দিই, ইউএনওকে ফোন দেই। পরে প্রশাসন এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে