বাঁশখালীর সাবেক এমপি মোস্তাফিজসহ ৬৭ জনের বিরুদ্ধে, সাংবাদিকের মামলা
-----------------------------------
মোঃহাসানুর জামান বাবু,চট্টগ্রাম।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীসহ ৬৭ জনের বিরুদ্ধে বাঁশখালী থানায় একটি মামলা হয়েছে।
সোমবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে মো. বেলাল উদ্দিন নামের এক সাংবাদিক বাদী হয়ে বাঁশখালী থানায় মামলাটি দায়ের করেন। তিনি দৈনিক সময়ের আলো ও একুশে পত্রিকার বাঁশখালী প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন।
মামলায় মোস্তাফিজ ছাড়াও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বাঁশখালী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী মোহাম্মদ গালীব সাদলী (৫০), চাম্বল ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী (৫২), বাঁশখালীর সাবেক মেয়র তোফায়েল বিন হোছাইন (৪৫),, শীলকূপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কায়েস সরওয়ার সুমন (৪২), সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক খোরশেদ আলম, সাবেক উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোছাইন ও ছনুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম. হারুনুর রশীদসহ ৬৭ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে। মামলায় ১০০/১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট ৬টি মামলায় আসামি করা হয় সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মামলার বাদী মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন পটিয়া সরকারি কলেজের অনার্স ৩য় বর্ষের বাংলা বিভাগের ছাত্র। গত ৪ আগস্ট সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর নির্দেশে শেখেরখীল রাস্তার মাথা এলাকায় নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্রজনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সাংবাদিক বেলাল উদ্দিনসহ শতশত ছাত্র জনতা শেখেরখীল রাস্তার মাথার মোড়ে দুপুর ২ টার সময় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ব্যানারে অবস্থান নেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনরত অবস্থায় সেদিন আনুমানিক দুপুর ২টার সময় এজাহার নামীয় মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর আসামীর হুকুমে ও নেতৃত্বে আসামীরা সহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫০/৬০ জন আসামী চাম্বল বাজারের দক্ষিণ পাশে জেনারেল হাসপাতালের সামনে অবস্থান নিয়ে হাতে বাঁশ, কাঠের লাঠি, ইট, পাথর, লোহার রড ও আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এলোপাতাড়িভাবে গুলি বর্ষণ করতে থাকে। আসামীগণের গুলি বর্ষণের আওয়াজ পেয়ে আমরা আতংকিত হয়ে জীবন রক্ষার্থে শেখেরখীল রাস্তার মাথার দক্ষিণে যাত্রা শুরু করলে চেয়ারম্যান ঘাটার সামনে পূর্ব থেকে অবস্থান নেওয়া অন্যান্য আসামীরা হাতে বিদেশী অস্ত্র সহ নিরস্ত্র ছাত্রজনতার উপর ইট পাটকেল ও অবিরত গুলি বর্ষণ করতে থাকে এবং আনুমানিক ২৫টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। দুইদিক থেকে আসামীগণ অতর্কিত আক্রমণ করে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলরত শতশত ছাত্র জনতাকে ধারালো অস্ত্র ও লাঠি সোটা দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে বেধড়ক মারধর করে মাথা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। আসামীগণের নিক্ষেপকৃত ইট পাটকেল, ককটেল ও অনবরত গুলি বর্ষণের ফলে অসংখ্য ছাত্র-জনতার চোখ-মুখ, হাত-পায়ে গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করে। আসামীগণের দ্বিমুখী আক্রমণের ফলে নিরহ ও নিরস্ত্র ছাত্র জনতা জীবন রক্ষার্থে শেখেরখীল, রাস্তার মাথার মোড়ে পশ্চিম দিকে যাওয়ার সময় বায়তুশ শরফ মসজিদের সামনে রাস্তার উপর পৌঁছলে ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে হত্যার উদ্দেশ্যে আসামীগণের ছোটা ছররা গুলি শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ভুক্তভোগী শাকের উল্লাহ (২৫) গুরুতর জখম হয়। শাকের উল্লাহ শেখেরখীল ৪নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদ ইসলামের ছেলে। ছররা গুলির আঘাতে ভুক্তভোগী শাকের উল্লাহ মাটিতে পড়ে গেলে আসামীরা লাঠি সোটা ও লোহার রড নিয়ে ভুক্তভোগীকে হত্যার উদ্দেশ্যে বেধড়ক মারধর করে। আসামীগণের অমানসিক নির্যাতনে শাকের উল্লাহ জ্ঞান হারিয়ে ফেললে আসামীরা ভিকটিমকে মৃত ভেবে চলে যায়।
এ বিষয়ে সাংবাদিক বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ভাঙ্গারি মাল ব্যবসায়ী শাকের উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেছে। সে বর্তমানে ক্রেচে ভর দিয়ে চলাফেরা করে। আইনের আশ্রয় নেওয়ারও সামর্থ্য নেই তার। তাই শাকের উল্লাহ ও তার স্বজনদের অনুমতি নিয়ে আমি বাদী হয়ে মামলা করেছি। আমরা ন্যায় বিচার প্রত্যাশী।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সহ প্রত্যক্ষদর্শীরা শাকের উল্লাহকে উদ্ধার করে বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করি। অবস্থার অবনতি হওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাসপাতালে চিকিৎসা করে গুলিবিদ্ধ ছররা গুলি বের করি এবং এখনো ১৩৫ টি মতো ছররা গুলি তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যমান আছে।’
বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগী শাকের উল্লাহর পক্ষ থেকে এক সাংবাদিক মামলা দায়ের করেছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ আগস্ট বাঁশখালী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল হামিদের আদালতে বাঁশখালী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান চৌধুরী ও সরল ইউনিয়ন বিএনপি নেতা জাফর আহমদ আহমদ বাদী হয়ে দুটি মামলা করেন। এর আগে সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ও ৫ চেয়ারম্যান, এমপি কন্যা সহ দলীয় শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ৪ জুলাই শফকত চাটগামী ও কালীপুরের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরুল হক বাদী হয়ে অপর দুটি মামলা করেছিলেন। সব মিলে সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীসহ দলীয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ৬টি মামলা হয়েছে।