রাসেল ভাইপার সাপের বিষ অত্যন্ত বিষাক্ত ডাঃ সৈয়দ হোসাইন আল ফারুকীঃ
আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি প্রতিনিধি
রাসেল ভাইপার সাপের বিষ অত্যন্ত বিষাক্ত
এবং মানুষের মধ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। বিষে এনজাইম, পেপটাইড এবং প্রোটিনের একটি জটিল মিশ্রণ রয়েছে যা বিভিন্ন শারীরিক সিস্টেমকে আক্রমণ করে। মানবদেহে রাসেল ভাইপার বিষের প্রভাব গুলো নিম্নে আলোচনা করা হল :
### হেমোটক্সিক প্রভাব
- **জমাট বাধা**: বিষে প্রোকোআগুল্যান্ট থাকে যা রক্তকে প্রথমে জমাট বাঁধতে দেয়, তারপরে অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্টস যা জমাট বাঁধতে বাধা দেয়, যার ফলে প্রসারিত ইন্ট্রাভাসকুলার জমাট (DIC) হয়। এর ফলে মারাত্মক অভ্যন্তরীণ রক্তপাত হতে পারে।
- **রক্তপাত এবং রক্তক্ষরণ**: আক্রান্তরা মাড়ি, নাক এবং অন্যান্য মিউকাস মেমব্রেন থেকে স্বতঃস্ফূর্ত রক্তপাত অনুভব করতে পারে। অভ্যন্তরীণ রক্তপাত, বিশেষ করে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টেও (খাদ্যনালীতে) ঘটতে পারে।
- **ব্রুইসিং এবং হেমাটোমা **: ত্বকের নীচে স্থানীয় রক্তক্ষরণ ব্যাপক ক্ষত এবং হেমাটোমা তৈরি করতে পারে।
### স্থানীয় প্রভাব
- **ব্যথা এবং ফোলা**: কামড়ের স্থানটি সাধারণত অত্যন্ত বেদনাদায়ক এবং ফুলে যায়। ফোলা পুরো অঙ্গে ছড়িয়ে যেতে পারে।
- **নেক্রোসিস**: কামড়ের জায়গার চারপাশে টিস্যুর ক্ষতি নেক্রোসিস হতে পারে, গুরুতর ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের হস্তক্ষেপ বা এমনকি অঙ্গচ্ছেদের প্রয়োজন হয়।
- **ব্লিস্টারিং**: কামড়ের স্থানের চারপাশে ফোসকা তৈরি হতে পারে, যা রক্ত বা সিরামে ভরা।
### পদ্ধতিগত প্রভাব
- **কিডনি ব্যর্থতা**: তীব্র বিষ কিডনি আঘাত (AKI) বা ব্যর্থতার কারণ হতে পারে, যা মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ। এটি হেমোলাইসিস এবং রাবডো মায়োলাইসিস থেকে সরাসরি নেফ্রোটক্সিসিটি এবং সেকেন্ডারি প্রভাবের কারনে হয়।
- **হাইপোটেনশন**: বিষের কারণে রক্তচাপ কমে যেতে পারে (হাইপোটেনশন), যা রোগীর শরীরে শক (shock) তৈরি করতে পারে।
- **স্নায়বিক উপসর্গ**: যদিও কম সাধারণ, কিছু ভুক্তভোগী স্নায়ুতন্ত্রের উপর বিষের প্রভাবের কারণে মাথা ঘোরা, মাথাব্যথা এবং মানসিক অবস্থার পরিবর্তন অনুভব করতে পারে।
### হেমোলাইটিক প্রভাব
- **লোহিত রক্ত কণিকা ধ্বংস**: বিষ হেমোলাইসিস, লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস করে রক্তাল্পতা এবং জন্ডিসের কারণ হতে পারে।
- **হিমোগ্লোবিনুরিয়া**: হিমোলাইসিসের ফলে প্রস্রাবে হিমোগ্লোবিনের উপস্থিতি হতে পারে (হিমোগ্লোবিনুরিয়া), এর কারনে প্রস্রাব গাঢ় বা লালচে রঙ হয় ।
### অন্যান্য প্রভাব
- **বমি বমি ভাব এবং বমি**: এই রোগীগুলোর প্রায়ই গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল উপসর্গ যেমন বমি বমি ভাব এবং বমি অনুভব করে।
- **শ্বাসকষ্ট**: গুরুতর ক্ষেত্রে, শক, রেনাল ব্যর্থতা এবং সিস্টেমিক প্রভাবের সংমিশ্রণের কারণে শ্বাসযন্ত্রের ব্যর্থতা ঘটতে পারে।
### চিকিৎসা
- **অ্যান্টিভেনম**: রাসেল ভাইপার কামড়ের প্রাথমিক চিকিৎসা হল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্দিষ্ট অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করা। অ্যান্টিভেনম বিষকে নিরপেক্ষ করতে পারে এবং এর অনেক বিষাক্ত প্রভাব প্রশমিত করতে পারে।
- **সহায়ক যত্ন**: এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হতে পারে শিরায় তরল, ব্যথা ব্যবস্থাপনা, রক্ত সঞ্চালন, কিডনি ব্যর্থতার জন্য ডায়ালাইসিস এবং নেক্রোসিস এবং ফোসকার জন্য ক্ষতের যত্ন।
- **মনিটরিং**: রোগীদের ডিআইসি, রেনাল ফেইলিওর এবং সেকেন্ডারি ইনফেকশনের মতো জটিলতার জন্য নিবিড় পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন।
রাসেল ভাইপার এনভেনমেশনের সাথে যুক্ত অসুস্থতা এবং মৃত্যুহার কমানোর জন্য প্রাথমিক এবং উপযুক্ত চিকিৎসা হস্তক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রাসেল ভাইপার সাপ কামড়ানর পরে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব সময় নষ্ট না করে হাসপাতালে বা স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ যোগাযোগ করুন।
স্বাস্থ্য বিষয়ক বিষয় গুলো সম্পর্কে আপডেট থাকতে এই পেইজ টি ফলো করে সাথে থাকুন।
ডাঃ সৈয়দ হোসাইন আল ফারুকী
এম.বি.বি.এস, এম.আর.সি.পি. (ইউ.কে)
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, এন.এইচ.এস (ইংল্যান্ড)