মোঃ ইমরান হোসেন জেলা প্রতিনিধি খুলনাঃ
খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলায় বেড়েছে চাঁদাবাজির ঘটনা। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ করে কোন সুরাহা পাচ্ছে না ভুক্তভোগিরা। থানায় অভিযোগ করার কারনে উল্টো হামলার শিকার হয়েছেন ভুক্তভোগি একজন ব্যবসায়ী। চাঁদার টাকা না পেয়ে এবং থানায় চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার কারনে একজন ব্যবসায়ী এবং তার সহকারী, সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন। বটিয়াঘাটার চক্রাখালী এলাকার তেঁতুলতলা গ্রামে শুক্রবার সকাল ৮.৩০ মিনিটে সন্ত্রাসীরা এ হামলা চালায়। এ ঘটনায় গুরুতর অবস্থায় আহত দুজনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা হলেন, (১) আলামিন মুন্সি (৪৫), পিতা: লুৎফর রহমান মুন্সি, (২) প্রিন্স হাওলাদার (৪০),পিতা: কাদের হাওলাদার। হামলাকারীদের নাম ফেরদৌস হাওলাদার, পিতা: ইমরান হাওলাদার ও বজলুর হাওলাদার, পিতা: নজরুল ইসলাম বজলু। ঘটনাসূত্রে জানা যায়, সন্ত্রাসী হামলায় আহত আলামিন একজন ঘের ব্যবসায়ী। তিনি বটিয়াঘাটার তেঁতুলতলা মৌজায় সরকারী খাল ইজারা নিয়ে মৎস্য চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তার কাছে থেকে অবিযুক্ত ফেরদৌস এবং ইমরান দীর্ঘদিন চাঁদা দাবী করছিলো। তিনি এর প্রতিবাদ করলে হামলাকারীরা তার ওপর চড়াও হন। নিরাপত্তার স্বার্থে আহত আলামিন মুন্সি বটিয়াঘাটা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এ অভিযোগের ভিত্তিতে ২৯ শে মার্চ বটিয়াঘাটা থানায় অভিযুক্তদের ডেকে এবং অভিযোগকারী আলামিন মুন্সিকে ডেকে সমস্যার সমাধান করা হয়। অভিযোগকারীকে থানা কর্তৃক নিশ্চিত করা হয় যে, ফেরদৌস হাওলাদার এবং ইমরান হাওলাদার তার কাছে থেকে আর চাঁদা দাবী করবেন না। কিন্তু ঘটনা তার উল্টো ঘটেছে। থানায় অভিযোগ করার কারনে আলামিন মুন্সিকে তেঁতুলতলা কালভার্ট এলাকায় পেয়ে ফেরদৌস এবং ইমরান এলোপাতারি কুপিয়ে যখম করেন। এ সময় প্রিন্স হাওলাদার এবং সোহরাব হোসেন ঠেকাতে আসলে তাদেরকেও কুপিয়ে যখম করে হামলাকারী। এ সময় হামলাকারীদের সাথে আরো ৮—১০ জন অজ্ঞাত লোকজন ছিলো। এ সময় ভুক্তভোগিদের চিৎকারে এলাকার লোকজন আসতে শুরু করলে হামলাকারীরা দ্রুত পালিয়ে যায়। আহত অবস্থায় আলামিন মুন্সি এবং প্রিন্স হাওলাদারকে দ্রুত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল সরেজমিনে, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আলামিন মুন্সির পায়ে এবং প্রিন্স হাওলাদারের মাথায় , দুই হাতে এবং দুই পায়ে ব্যান্ডেজ পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়। পরিদর্শনকারী চিকিৎসক জানান, তাদের মাথা, হাতে—পায়ে গুরুতর যখম হয়েছে। চিকিৎসারত অবস্থায় রয়েছেন রোগীরা। তেঁতুলতলা গ্রামের স্থানীয়রা জানান, ফেরদৌস এবং আলামিন শুধু আমাদের গ্রামেই না, চক্রাখালীর আতংক। তারা দুজনেই মাদক ব্যবসা এবং নানান অপরাধের সাথে জড়িত। চাঁদাবাজি তো তাদের নিয়মিত অপরাধ। ভয়ে লোকজন তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান না। রাত—বেরাতে আমাদের চলাচল করতে হয় বলে , হামলার ভয়ে কেউ অভিযোগ করতে সাহস পায়না। তাদের সাথে অনেক লোকজন রয়েছে। এজন্য তারা প্রশ্রয় পেয়ে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। আহত আলামিন মুন্সি জানান, সরকারের কাছে থেকে তেঁতুলতলা খাল ইজারা নিয়ে মৎস্য ব্যবসা করছি। কিন্তু ফেরদৌস এবং ইমরান দীর্ঘদিন টাকা দাবী করছে। আমি তার প্রতিবাদ করলে আমাকে হুমকি দেয় তারা। কিছুদিন পর তারা আমাকে বলে, ১৫দিনের মধ্যে যেনো তাদের দাবীকৃত ৩০ হাজার টাকা দেয়া হয়। আমি নিরুপায় হয়ে থানায় লিকিত অভিযোগ করি। গত ২৯ শে মার্চ বটিয়াঘাটা থানায় তাদের এবং আমাকে ডেকে এ সমস্যার সমাধান করা হয়। ফেরদৌস এবং ইমরান আর টাকা দাবী করবে না বলে জানালেও মনে মনে তারা ক্ষুব্ধ ছিলো। যার ফলে(শুক্রবার) আমাকে আর আমার সাথে কাজ করে প্রিন্স হাওলাদারকে কুপিয়ে যখম করে। আমরা চিৎকার করলে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে, তারা পালিয়ে যায়। তারা গরুর গোশ কাটা চাপাতি এবং রড দিয়ে এলোপাতারি কোপ এবং শরীরের বিভন্ন স্থানে আঘাত করে। এলাকাবাসীর কারনে পালিয়ে যায়। নইলে তারা আমাকে মেরেই ফেলতো। তারা অনেকের কাছে থেকেই চাঁদা নেয় ভয়ভীতি দেখায়ে। কিন্তু কেউ অভিযোগ করতে সাহস পায় না। আমি থানায় অভিযোগ করে প্রতিবাদ করার কারনেই তারা চড়াও হয়েছে। যার কারনেই আমি হামলার শিকার হয়েছি। আহত প্রিন্স হাওলাদার বলেন, ঘেরের মাছের খাবার প্রস্তুত করছিলাম। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কয়েকজন পিছনে থেকে রড দিয়ে কয়েকটি বারি দেয় পিঠে। ঘুরে ঠেকাতে গেলে চাপাতি দিয়ে আমাকে কুপিয়ে যখম করে। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তিনি আরো বলেন, ফেরদৌস এবং ইমরান দুজনেই আলামিন ভাইয়ের কাছে বিভিন্ন সময়ে ব্যবসার টাকার অংশ দাবী করে। তারা বলেন যে, ব্যবসা করতে হলে চাঁদা দিতে হবে। নইলে এ খাল ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু থানায় অভিযোগ করার কারনে তারা চড়াও হয়ে এ হামলা করেছেন। উল্লেখ্য, এ প্রতিবেদন করাকালীন সময়ে এ হামলার ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলমান ছিলো।